April 12, 2023
একটি বিশাল অববাহিকা আকৃতির অগভীর জলাভূমিকে হাওর বলা হয়। হাওরগুলো প্রতিবছর বৃষ্টির জলে প্লাবিত হয় এবং তরঙ্গবিহীন সমুদ্রের আকার নেয়। বছরের সাত মাস পানিতে ডুবে থাকে আবার শীত এবং গ্রীষ্মে, হাওরগুলি সীমাহীন মরুভূমির মতো হয়ে যায়। জল কমে গেলে হাওরের বিলগুলি জেগে ওঠে। হাওরের বুকে লুকিয়ে থাকা গ্রামগুলি জেগে উঠলে কৃষকরা বন্যার ফলে জমা হওয়া উর্বর জমিতে রবি ফসল এবং বোরো ধানের চাষ করে।
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কয়েকটি বিশাল হাওর রয়েছে। কাওয়া দিঘি হাওর, ছাইয়ার হাওর, টাঙ্গুয়ার হাওর, টল্লার হাওর, নলুয়ার হাওর, পাছশোল হাওর, মইয়ার হাওর, মকর হাওর, মাহমুদপুর হাওর, রায়ের গাওন হাওর, সুরমা বাওলার হাওর, হাকালুকি। এর মধ্যে সর্বাধিক বিখ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওর। সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হাওরের মোট আয়তন ৬৯১২ একর। তবে বর্ষাকালে এই হাওরের আয়তন বেড়ে প্রায় ২০,০০০ একর পর্যন্ত হয়ে থাকে।
প্রায় ৩০টি ঝরনা এসে সরাসরি মিশেছে ভারতের মেঘালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই টাঙ্গুয়ার হাওরে। সারিসারি হিজল-করচশোভিত, পাখিদের কলকাকলি সদা মুখরিত টাংগুয়ার হাওর। এটি মাছ, পাখি এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর এক বিশাল অভয়াশ্রম। প্রায় ১৪০ প্রজাতির মাছ, ১২ প্রজাতির ব্যাঙ এবং ১৫০ প্রজাতির বেশি সরীসৃপের সমন্বয়ে জীববৈচিত্র্য গড়ে উঠেছে। শীতকালে এই হাওরে প্রায় ২৫০ প্রজাতির অতিথি পাখির বিচরণ ঘটে। জীববৈচিত্র্য ও সৌন্দর্যের কারণে টাঙ্গুয়ার হাওরের সুনাম শুধু সুনামগঞ্জ বা বাংলাদেশে নয়, বাইরেও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ মিঠা পানির এ হাওরকে ২০০০ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। সুন্দরবনকে ধরা হয় প্রথম। ইরানের রামসার অঞ্চলে প্রথম জলাভূমি শনাক্ত করার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, সেখান থেকেই এই নামটি এসেছে।
১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে টাঙ্গুয়ার হাওরকে 'প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা' হিসেবে ঘোষণা করা হয়, তখনই অবসান হয় দীর্ঘ ৬০ বছরের ইজারাদারির। হাওর এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন, সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ড সরকারের মধ্যে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে ১২ ফেব্রুয়ারি একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ নভেম্বর থেকে হাওরের নিয়ন্ত্রণ নেয় জেলা প্রশাসন। সুইস অ্যাজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন (এসডিসি) এবং আইসিইউএন ২০০৬ সালের ডিসেম্বর থেকে 'টাঙ্গুয়ার হাওর সমাজভিত্তিক টেকসই ব্যবস্থাপনা' প্রকল্প পরিচালনা করছে।
কিভাবে যাবেন?
সিলেটের কুমারগাঁও বাস স্ট্যান্ড থেকে সুনামগঞ্জ যাবার লোকাল ও সিটিং বাস আছে। সিটিং বাস ভাড়া ১০০ টাকা, সুনামগঞ্জ যেতে দুই ঘন্টার মত সময় লাগবে। অথবা শাহজালাল মাজারের সামনে থেকে সুনামগঞ্জ যাবার লাইট গাড়ি তে ২০০ টাকা ভাড়ায় যাওয়া যায়।
সুনামগঞ্জ নেমে সুরমা নদীর উপর নির্মিত বড় ব্রীজের কাছে লেগুনা/ সিএনজি/ বাইক করে তাহিরপুরে সহজেই যাওয়া যায়। তাহিরপুরে নৌকা ঘাট থেকে সাইজ এবং সামর্থ অনুযায়ী নৌকা ভাড়া করে বেড়িয়ে আসুন টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে। তবে শীতকালে পানি কমে যায় বলে আপনাকে লেগুনা/সিএনজি/বাইক যোগে যেতে হবে সোলেমানপুর। সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে নিতে পারবেন। আর শীতকালে গেলে আপনি অতিথি পাখির দেখা পাবেন।
কোথায় খাবেন?
দিনে দিনে ঘুরে চলে আসলে তাহিরপুরে খাবার হোটেল থেকে রওনা হবার আগে সকালের ও ফিরে আসার পর দুপুরের খাবার হাওরের প্রায় ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির মাছের মধ্যে নিজের পছন্দের মাছ দিয়ে আহার পর্ব সেরে ফেলতে পারেন। আর যদি টাঙ্গুয়ায় রাতে থাকার পরিকল্পনা থাকে এবং নিজেরা রান্না করে খাওয়ার ইচ্ছে থাকে তবে তাহিরপুর থেকে নৌকায় উঠার আগে যে কয়দিন অবস্থান করবেন সেই কয়দিনের বাজার করে নিতে পারেন। আর তাজা মাছ কেনার জন্য হাওরের মাঝখানের ছোট বাজারগুলোতে যেতে পারেন। এছাড়া সাথে নিতে পারেন দেশি হাঁস কিংবা দারুণ সব শুঁটকি। আবার নিজেরা রান্না করার ঝামেলা এড়াতে চাইলে টেকেরঘাট রাত্রি যাপন করলে সেখানে টেকেরঘাট বাজার থেকে রাতের খাবার খেয়ে নিতে পারবেন।